অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ডায়াবেটিস রোগ বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারন

0
0

ডায়বেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, অগ্নাশয় যখন পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না অথবা শরীর যখন উৎপাদিত ইনসুলিন কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে না তখনই এই রোগ সৃষ্টি হয়। ইনসুলিন একটি হরমোন যা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রন করে।’

ছবিঃ সংগৃহীত

অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের কারণে উদ্বেগজনকভাবে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে , বলেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা । এত পরিমাণ রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের স্বাস্থ্যখাতের জন্য তা বিশাল বোঝা হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির সভাপতি ডা. একে আজাদ খান বলেছেন,দেশে প্রায় ৮৫ লাখ লোক ডায়াবেটিসে ভুগছে। এদের মধ্যে ৫ শতাংশ টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগী এবং ৯৫ শতাংশ টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগী।’ ডায়াবেটিস হচ্ছে বিশ্বব্যাপী বিদ্যমান অন্যতম অসংক্রামক ব্যাধি। স্বাস্থ্যসম্মত নয় এমন জীবনযাত্রার কারণে মূলত দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অপর্যাপ্ত শরীর চর্চা এবং ফাস্টফুড নির্ভর খাদ্যাভ্যাস সহ অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য এই রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রতিদিনের জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস এবং জিনগত কারণসহ অনেকগুলো কারণ ডায়াবেটিস রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। `যদি আমরা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণ করি তাহলে আমরা ৭৫ শতাংশ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে পারি। ২৫ শতাংশ রোগী স্বাস্থ্য বিধি মেনে এই অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রন করতে পারে।’
ডায়াবেটিস রোগের ধরণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, বেশিরভাগ লোকই সচেতনতার অভাব এবং পুষ্টিকর খাবার সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে।
টাইপ-১ ডায়াবেটিস হলো ইনসুলিন নির্ভর ডায়াবেটিস, অগ্নাশয় যখন খুব সামান্য ইনসুলিন উৎপাদন করে অথবা কোন ইনসুলিন উৎপাদন করে না তখন এটি দীর্ঘস্থায়ী হয়। শক্তি উৎপাদনের জন্য কোষে সুগার (গ্লুকোজ) সরবরাহে ইনসুলিন হরমোনের প্রয়োজন হয়।
টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগীর সুস্থ্য থাকার জন্য নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হয়, ডায়াবেটিস টাইপ-২ রোগীর জন্য প্রাথমিকভাবে ইনসুলিন নিতে হয় না, তবে যখন এটি গুরুতর হয়ে ওঠে তখন তাদের ইনসুলিন নিতে হয়।
টাইপ-১ ডায়াবেটিস জটিলতায় হার্ট, রক্তনালী, স্নায়ুতন্ত্র, চোখ, কিডনিসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ আক্রান্ত হতে পারে। এ কারণে বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক লোক ডায়াবেটিস অথবা ডায়াবেটিস জনিত জটিলতায় মারা যায়।
তিনি এই দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকে জনগণের জীবন বাঁচাতে বিনামূল্যে ইনসুলিন সরবরাহের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।



রক্তে স্বাভাবিক মাত্রায় সুগার নিয়ন্ত্রন অতিরিক্ত মাত্রায় হ্রাস পেয়ে অনেক জটিল ঝুঁকি তৈরি করে এ কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এন্ড্রেক্রাইনোলজি (হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, প্রযুক্তি নির্ভর জীবনযাত্রা এবং অপরিকল্পিত নগরায়ন দেশে ডায়াবেটিস রোগী বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা রাখছে।

ডায়াবেটিসের দুটি সাধারণ ফর্ম টাইপ-১ ও টাইপ-২ এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন,“আমরা লক্ষ্য করছি যে, “অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের কারণে দেশে টাইপ-২ ডায়াবেটিস খুব দ্রুত বাড়ছে। কারণ হচ্ছে শিশুরা সীমাবদ্ধ জায়গার মধ্যে বেড়ে উঠছে এবং বেশীর ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ নেই।

তিনি বলেন, শিশুরা একইভাবে তাদের বাসস্থানে বিশেষ করে দেশের মেট্রোপলিটান সিটিগুলোতে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে।সেলিম সতর্ক করে দিয়ে বলেন, অনেক গর্ভবতী নারী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের কারণে শিশু মৃত্যু হার বাড়ছে।



এছাড়াও বেশীরভাগ লোকই তাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগ সম্পর্কে জানেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস টাইপ-১ ডায়াবেটিসে পরিণত হয়ে গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলে দেয়।তিনি বলেন, বেশীরভাগ লোকের ডায়াবেটিস রোগ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাব রয়েছে। এই দীর্ঘস্থায়ী রোগ সম্পর্কে সচেতন করতে অবশ্যই এ বিষয় আমাদের শিক্ষা পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যাতে শিশুরা এই নীরব ঘাতক ডায়াবেটিস রোগ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারে।

সূত্র: বাসস

SHARE
Previous articleকরোনার টিকা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here